শুক্রবার, ৩রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চামড়া ক্রয়ে ব্যাংক ঋণ ২৩০ কোটি টাকা

ডেস্ক নিউজ : কোরবানির চামড়া ক্রয়ে ২৩০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকারি চার ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক প্রস্তুত থাকলেও ভালো গ্রাহকের অভাবে কোরবানির চামড়া কিনতে কোনো ঋণ দিতে পারেনি। বিশ্ববাজারে বিক্রি কমে যাওয়া এবং কাঁচা চামড়া কিনতে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন। বিপরীতে খাতটিতে আগের দেয়া ঋণের মধ্যে বেশির ভাগ খেলাপি হয়ে পড়ায় নতুন করে বেশি ঋণ দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান কয়েকজন ব্যাংকার। তাদের মতে, ভালো গ্রাহক না পাওয়ায় এবার বেশি ঋণ দিতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র জানায়, এ বছর চামড়া ক্রয়ে সোনালী ব্যাংক ১০০ কোটি, জনতা ব্যাংক ১৮০ থেকে ২০০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১৮৫ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ১৫৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৫১ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ৩৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক ভালো গ্রাহকের অভাবে ঋণ দিতে পারেনি। এমনকি একজন ভালো গ্রাহক প্রথমে ঋণের আবেদন করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ দেখে শেষ পর্যন্ত তিনি আর ঋণ নেননি।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন বলেন, কোরবানির চামড়া কিনতে একজন গ্রাহক ২০ কোটি টাকার আবেদন করেছিলেন। আমরা ১৫ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ দেখে তিনি অনুমোদিত টাকাও নেননি। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, চামড়ায় ঋণ দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু ভালো গ্রাহক না পাওয়ায় ঋণ দিতে পারিনি। জানা গেছে, গত বছর থেকে রাস্তায়, গলিতে, বৃষ্টির পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে রফতানি খাতের চামড়া সম্পদ। সরকারের দাম নির্ধারণ, রফতানির সুযোগ করে দেয়া, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও পুনঃতফসিল সুবিধা দিয়েও কোনোভাবেই শৃঙ্খলায় আসছে না এ সম্পদের ব্যবস্থাপনায়। ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশ্বিক বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই অর্ধেক চামড়া অবিক্রীত থাকছে। এতে অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোকে বলেছিলাম আমাদের সবকিছুর ওপর লক্ষ্য দিয়ে আমাদের ফ্রেশ ঋণ দিতে। কিন্তু ব্যাংক সে পথে হাঁটেনি। যার কারণে সময়মতো আমরা আমাদের ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারছি না। ঋণ না দেয়ার যুক্তিও রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। কেননা গত কয়েক বছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক যে ঋণ দিয়েছিল তার একটি বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, কয়েক বছরে চামড়া খাতে বিতরণ করা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ খেলাপি। ৯ জুলাই ঈদে চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাতে কাঁচা চামড়া ক্রয় করতে সক্ষম হয় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়ক জামানত গ্রহণের বিষয়টি নমনীয়ভাবে দেখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

এর আগে ৫ জুলাই কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের নিকট অর্থ প্রবাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে এ খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ আট বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া সুবিধাভোগীরা নতুন ঋণের আবেদন করতে পারবেন বলেও জানানো হয়।

এই বিভাগের আরো খবর